মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে ব্যবস্থাপনার উৎপত্তির সহ-সম্পর্ক রয়েছে। শুরুতে ব্যবস্থাপনা ছিল পরিবার ও দলভিত্তিক। সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে সকল ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার ধারণা ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবস্থাপনার ধারণাটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে ব্যবসায়ী সমাজের ব্যবসা পরিচালনা পদ্ধতি থেকে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে অন্যদের দ্বারা প্রয়োজনীয় কাজ করিয়ে নেওয়ার কৌশলকে ব্যবস্থাপনা বলে। আলোচ্য অধ্যায়ে আমরা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার ধারণা, কার্যাবলি, এবং ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে জানতে পারব।
এ অধ্যায়টি পাঠ শেষে আমরা-
জনাব রহমান গত ৫ বছর যাবত কাপড়ের ব্যবসায় পরিচালনা করে আসছেন। তার দোকানে সব প্রকারের কাপড় ও তৈরি পোশাক পাওয়া যায়। প্রতিদিন অনেক ক্রেতা সেখানে ভিড় করেন। তিনি নিজেই ব্যবসায় পরিচালনা করেন। ব্যবসায়ের প্রসার বৃদ্ধি পাবার কারণে তিনি কর্মচারী নিয়োগের চিন্তা-ভাবনা করতে লাগলেন। সম্প্রতি তিনি একজন কর্মচারী নিয়োগ করলেন। ফলে তার কাজের চাপ কিছুটা কমল। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর ক্রেতারা কর্মচারীর বিরুদ্ধে দেরিতে দোকান খোলা ও দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ আনেন । রহমান সাহেব ক্রেতাদের অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শুনে তার কর্মচারীকে ডেকে ব্যবসায়ের সুনাম রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিলেন। কর্মচারীটি তার ভুল বুঝতে পারল। সে ভবিষ্যতে আরো মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হলো।
উপরের গল্পে ব্যবসায়ী রহমান সাহেবের কর্মচারী নিয়োগের চিন্তা, কর্মচারী নিয়োগ, কর্মচারীর বিরুদ্ধে ক্রেতাদের অভিযোগ শোনা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া সবকিছুই তার ব্যবসায় ব্যবস্থাপনার অংশ।
ব্যবস্থাপনা হচ্ছে অন্য লোকদের সামর্থ্যকে কাজে লাগিয়ে কোনো কাজ করিয়ে নেওয়ার দক্ষতা ও কৌশল। আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক বলে পরিচিত হেনরি ফেওল (Henri Fayol)-এর মতে ‘ব্যবস্থাপনা হলো পূর্বানুমান ও পরিকল্পনা, সংগঠিতকরণ, নির্দেশনা, সমন্বয়সাধন ও নিয়ন্ত্রণের সমষ্টি। ' ব্যবস্থাপনার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ—
পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্পাদিত কার্যাবলিকে ব্যবস্থাপনা বলা হয়। প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার মানবিক ও অন্যান্য উপাদানকে দক্ষতার সাথে পরিচালনার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবস্থাপনার আওতায় অনেকগুলো কাজ করতে হয়। নিম্নে ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি বিশ্লেষণ করা হলো—
১. পরিকল্পনা প্রণয়ন (Planning) : পরিকল্পনা হলো ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের দিক-নির্দেশনা। কোনো ব্যবসায় সংগঠনের পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভবিষ্যতে কী কাজ, কে, কীভাবে, কখন করবে তা নির্ধারণ করাই হলো পরিকল্পনা। ব্যবস্থাপনার প্রথম কাজ হচ্ছে পরিকল্পনা প্রণয়ন ।
২. সংগঠিতকরণ (Organizing) : ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয় সকল মানবিক ও বস্তুগত উপকরণ এবং সম্পদকে যথাযথভাবে ব্যবহার করার জন্য কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা বণ্টন এবং আন্তঃসম্পর্ক তৈরির কার্যাবলিকে সংগঠিতকরণ বলা হয় ।
৩. কর্মীসংস্থান (Staffing) : প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উপাদান হচ্ছে তার কর্মী বাহিনী। কর্মী বাহিনীকে ব্যবসায়ের অন্যতম মানবিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কার্য সম্পাদনের জন্য উপযুক্ত কর্মী সংগ্রহ, নির্বাচন, নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ প্রদান, পদোন্নতি, বদলি, ছাঁটাই প্রভৃতি কাজ কর্মীসংস্থানের অন্তর্ভুক্ত।
৪. নির্দেশনাদান (Directing) : পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কর্মীদের আদেশ-নির্দেশ প্রদান করাকে নির্দেশনা বলে। ব্যবস্থাপক কর্মীদের কোন কাজ কখন, কীভাবে সম্পন্ন করতে হবে তার নির্দেশনা প্রদান করে থাকেন। যথার্থ নির্দেশনা দিতে পারলে কর্মীরা সর্বাধিক দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারে। অনেকে নির্দেশনাদানকে নেতৃত্বদানের সাথে তুলনা করেছেন।
৫. প্রেষণাদান (Motivating) : প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরকে কাজের প্রতি আগ্রহী ও উৎসাহী করার প্রক্রিয়াকে প্রেষণা বলা হয়। প্রেষণার ফলে কর্মীরা আগ্রহ নিয়ে দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ হয় এবং মানসম্মত কাজ সম্পাদনে সক্ষম হয়।
৬. সমন্বয়সাধন (Co-ordinating) : সমন্বয় সাধন প্রক্রিয়ায় ব্যবসায় সংগঠনের কর্মী, বিভিন্ন বিভাগ ও উপবিভাগের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সকলে মিলে একটি দলে পরিণত হয় যা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ সম্পাদনে সহায়তা করে ।
৭. নিয়ন্ত্রণ (Controlling) : পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্য সম্পাদিত হচ্ছে কিনা তা তদারক করা, ত্রুটি-বিচ্যুতি নির্ণয় করা এবং প্রয়োজনে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার সার্বিক প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ বলা হয়। নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজতর হয়। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সঠিক ও সুদৃঢ় ভূমিকার কারনে ব্যবসায় সংগঠন তার আভ্যন্তরীন ও বাহ্যিক সকল অচলাবস্থা ও বাধা মোকাবেলা করে উন্নতির দিকে ধাবিত হয় । মূলত নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে সঠিক কাজ সঠিক পদ্ধতিতে সঠিক সময়ে সংঘটিত হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করা হয় ।
ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষক কোহিনূর আক্তার তার ক্লাসে প্রবেশ করে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন। শিক্ষার্থীরাও আনন্দের সাথে তাকে স্বাগত জানাল। শিল্পের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনার শুরুতে তিনি শিক্ষার্থীদের নিকট শিল্প কারখানার পরিদর্শন করার অভিজ্ঞতা জানতে চান। দেখা যায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর শিল্প কারখানা সরাসরি দেখার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তিনি সবাইকে নিয়ে জেলার বিসিক শিল্প নগরী পরিদর্শন করার আগ্রহ প্রকাশ করলে সকল শিক্ষার্থী আনন্দে ফেটে পড়ে। তিনি সবাইকে শান্ত করেন এবং বলেন এর জন্য প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিতে হবে। তাছাড়া আরো যা চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে-তা হলো-
কখন যাওয়া হবে?
কীভাবে যাওয়া হবে ?
কতজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক যাবেন ?
যেখানে যাবে তাদের কর্তৃপক্ষের সাথে কীভাবে যোগাযোগ করা হবে?
সবশেষে শিক্ষার্থীদের নিকট প্রশ্ন রাখলেন : কারখানা পরিদর্শনের জন্য আমাদের এসকল পূর্ব-ধারণা বা চিন্তা- ভাবনাকে আমরা কী বলতে পারি। শিক্ষার্থীরা সমস্বরে জবাব দিল : পরিকল্পনা। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ দিলেন। তিনি আরো বললেন, কোনো কাজ শুরু করার পূর্বে সে বিষয়ে বিশেষ চিন্তা-ভাবনা বা আগাম সিদ্ধান্তই হলো পরিকল্পনা। আরো পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, কোনো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কী কাজ করতে হবে, কখন করতে হবে, কোথায় করতে হবে, কত সময়ে কাজ শেষ হবে, এ সম্পর্কে অগ্রিম সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে পরিকল্পনা বলে। সঠিক পরিকল্পনা উদ্দেশ্য অর্জনকে সহজ করে। পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সকল উপকরণ ও সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দায়িত্ব সঠিকভাবে বণ্টন করা যায়। ফলে তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হয় এবং দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
‘আশার বাণী’ স্টোরের মালিক প্রশান্ত দাস তার নিজ এলাকায় সুনামের সাথে ব্যবসায় করে আসছেন। তিনি ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে তৈরি পোশাক, কসমেটিকস, শিশুদের খাদ্য-দ্রব্য ও খেলনাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। তবে তার ব্যবসায়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আইটেম হচ্ছে নিজের তত্ত্বাবধানে তৈরি বিভিন্ন প্রকারের আচার। প্রতি বছর তিনি স্থানীয় বাজার থেকে কাঁচা আম, আমড়া, পাকা বরুই, জলপাই, ও আমলকি কিনে আচার তৈরি করে বিক্রি করেন। সে জন্য বিভিন্ন মৌসুমে অস্থায়ীভাবে কিছু মহিলাকে নিয়োগ দেন যারা নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তাকে আচার বানাতে ও বোতলজাত করতে সাহায্য করেন। দিনে দিনে তার আচারের খ্যাতি বৃদ্ধি পেতে থাকে। তিনি আচার তৈরি ও বিক্রির জন্য একটি আলাদা বিভাগ খোলার সিদ্ধান্ত নিলেন। সে জন্য আচার তৈরিকারী মহিলাগণকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দিলেন। একজনকে পৃথক ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব দিলেন। বছরব্যাপী কাঁচামাল সংগ্রহ, আচার তৈরি ও তা সংরক্ষণ করার জন্য দায়িত্ব বণ্টন করে দিলেন।
প্রশান্ত দাসের সম্পাদিত সকল কাজ ব্যবসায় ব্যবস্থাপনার অংশ। এ সকল কাজকে সংগঠিতকরণ বলে। কারণ পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্যামল দাস তার ব্যবসায়ের মানবিক ও বস্তুগত সকল প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং সম্পদ সংগ্রহ ও সমন্বিত করে সেগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করার জন্য কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা বণ্টন করে দিয়েছেন। সংগঠিতকরণের ফলে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজতর হয়। প্রতিষ্ঠানের সকল সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা সহজ হয়। নিজেদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক সুদৃঢ় হওয়ার কারণে কাজের গতি বৃদ্ধি পায় ৷
আখিতারা ফার্নিচার্স-এর মালিক জনাব আরশাদ সামান্য পুঁজি নিয়ে তার ব্যবসায় শুরু করেছিলেন। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম, সততা, কর্মচারীদের পরিচালনা করার দক্ষতা ও ব্যবসায়ের উন্নতির প্রতি প্রবল আগ্রহ তাকে আজ সমাজের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। আজ তার ব্যবসায়ের পাঁচটি শাখা সুনামের সাথে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি কর্মচারীদের সকল অভাব-অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং সাধ্যমতো তাদের দাবি-দাওয়া পূরণ করার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে কর্মচারীরাও ব্যবসায়টিকে নিজেদের মনে করে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে, গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করে ব্যবসায়ের সুনাম বৃদ্ধির চেষ্টা করে যাচ্ছেন ।
কাহিনীটিতে আমরা জনাব আরশাদের যে গুণগুলো পাই সেগুলো :
উপরোক্ত সবগুলো গুণের সমষ্টিকে আমরা জনাব আরশাদের নেতৃত্বের গুণাবলি বলতে পারি। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব বলতে উদ্দেশ্য অর্জনকে সামনে রেখে কাজ সম্পাদনে কর্মীদের উৎসাহিত করার গুণ ও কৌশলকে বোঝায়।
ক্রমিক | নেতৃত্বের ধরন | বৈশিষ্ট্য |
১. | গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব (Democratic Leadership) |
|
২. | স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব (Autocratic Leadership) |
|
৩. | মুক্ত নেতৃত্ব (Laissez Faire Leadership) |
|
৪. | আমলাতান্ত্রিক নেতৃত্ব (Bureaucratic Leadership) |
|
যিনি নেতৃত্ব দেন তাকে নেতা বলা হয়। নেতার কাজ হচ্ছে উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রতিষ্ঠানেরকর্মীদের উৎসাহিত ও পরিচালনা করা।নেতৃত্বদানের কঠিন দায়িত্বশীল কাজটি সম্পাদনের জন্য একজন নেতার অনেকগুলো গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। কেননা উপযুক্ত নেতৃত্ব যেমন একটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনকে সহজতর করে, তেমনি নেতার অযোগ্যতা প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। নিম্নে একজন আদর্শ নেতার গুণগুলো বিশ্লেষণ করা হলো।
১. দৈহিক সামর্থ্য ও সুস্থতা : নেতাকে অনেক দৈহিক ও মানসিক পরিশ্রম ও চাপ বহন করতে হয়। এ জন্য তার দৈহিক সামর্থ্য থাকার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা থাকা আবশ্যক। তাছাড়া তার দৈহিক গঠনও আকর্ষণীয় হওয়া উচিত।
২. প্রখর ব্যক্তিত্ব : নেতাকে ব্যক্তিগতভাবে ধীর-স্থির হতে হয়। মার্জিত ব্যবহার, সম্মোহনী ক্ষমতা মিশ্রিত ব্যক্তিত্বের অধিকারী নেতাকে অধস্তনরা সম্মান করে।
৩. শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা : আনুষ্ঠানিক শিক্ষা মানুষকে অনেক ইতিবাচক জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনে সাহায্য করে। সাথে সাথে অভিজ্ঞতাও তাকে সমৃদ্ধ করে। তাই একজন নেতার শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা থাকা কাম্য।
৪. সাহস ও সততা : নেতাকে সবসময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হয়। তাকে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং কাজে হাত দিতে হয়। তাই তাকে হতে হয় সাহসী। সাথে সাথে তাকে সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ হতে হয় । কারণ সততা ও সাহসের জন্য সে অন্যের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা অর্জন করে।
৫. পরিশ্রম ও সহনশীলতা : পরিশ্রম যে কোন কাজের মূল। নেতাকেও তার দায়িত্বের জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়। নেতা যদি অলস হন, কাজ না করেন, অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যান তাহলে অধঃস্তনদের সঠিকভাবে পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাছাড়া সহনশীলতা না থাকলে তার পক্ষে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব হবে না।
৬. দায়িত্বশীলতা ও সহযোগিতা : দায়িত্বের প্রতি নেতার একাগ্রতা অনুসারীদের জন্য অনুপ্রেরণার কারণ হয় । অন্যদিকে সকলের প্রতি সহযোগিতার মনোভাব প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনকে সহজতর করে তোলে ।
৭. সাংগঠনিক দক্ষতা : একজন নেতার প্রতিষ্ঠানের সকল বিষয়ে দক্ষতা থাকা উচিত, যাতে কোন দায়িত্বের জন্য কে উপযুক্ত তা বাছাই করতে পারেন এবং সে অনুযায়ী দায়িত্ব বণ্টন করে দিতে পারেন।
৮. মানবিক সম্পর্ক অনুধাবনঃ একজন সফল নেতার অবশ্যই তার সাথের লোকদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, দৃষ্টিভঙ্গি, যোগ্যতা, রুচি, ব্যক্তিত্ব অনুধাবন করার যোগ্যতা থাকা উচিত। সহকর্মীদের মনোভাব অনুযায়ী নেতৃত্ব দিতে না পারলে কার্যকর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল আশা করা যায় না।
৯. সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা : যথাসময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য নির্ভর করে। নেতাকে তার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। নেতার গৃহীত সিদ্ধান্ত অধঃস্তনদের আস্থা ও মনোবল বাড়িয়ে দেয় ।
১০. জেন্ডার সচেতনতা : একজন নেতা তিনি নারী বা পুরুষ যেই হোন না কেন তাকে অবশ্যই তার সহকর্মী নারী-পুরুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সহানুভূতিশীল হতে হবে। তাকে অবশ্যই পক্ষপাতহীন হতে হবে। নারী-পুরুষের ভিন্ন-ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে সচেতন থেকে তাকে নেতৃত্ব দিতে হয় ৷
রাঙ্গামাটির সমীর চাকমা চাকরির চেষ্টা করে একটা বছর নষ্ট করল। বন্ধুবান্ধবদের অনেকেই পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই আবার চাকরি ও ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। শেষ পর্যন্ত সে ব্যবসায় করবে বলে মনস্থির করল। উপজেলার সরকারি বিদ্যালয়ের পাশে তাদের নিজস্ব দোকান আছে। সেখানে একটি স্টেশনারি দোকান দিয়ে ব্যবসায় শুরু করতে আগ্রহ প্রকাশ করল। তার সিদ্ধান্তে পিতা-মাতা খুশি হলো। কিন্তু কোথা থেকে মূলধন পাবে চিন্তা করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত ব্যবসায় শুরু করার জন্য পিতার নিকট থেকে এক লক্ষ টাকা ও পিসির নিকট থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা যোগাড় করল। প্রবাসী মামা এক লক্ষ টাকা দিতে রাজি হলো। পিতা তাকে টাকা-পয়সা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিলেন। প্রয়োজনে স্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকেও ঋণ নেওয়া যাবে বলে জানালেন। উপরের গলে সমীর চাকমার ব্যবসায় পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা,অর্থ সংগ্রহের উৎস অনুসন্ধান, অর্থ সংগ্রহ ও অর্থ ব্যবহারের যাবতীয় কার্যাবলিকে আমরা অর্থায়ন বলতে পারি।
সাধারণ অর্থে, ব্যবসায়ের জন্য অর্থ সংগ্রহ করাকে অর্থায়ন বলে। কিন্তু ব্যাপক অর্থে, ব্যবসায়ের আর্থিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য অর্থ সংগ্রহ, অর্থ সংরক্ষণ, সংগৃহীত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার সংক্রান্ত সকল কার্যাবলিকে ব্যবসায় অর্থায়ন বলা হয়।
যে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ বা মূলধনের প্রয়োজন। এ অর্থ প্রয়োজন হয় ব্যবসায় শুরু করার জন্য, ব্যবসায় কার্যক্রম সচল রাখার জন্য এবং ব্যবসায় সম্প্রসারণের জন্য। ব্যবসায়ের এ মূলধন বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করার সুযোগ রয়েছে। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো-
১. নিজস্ব তহবিল : ক্ষুদ্র ব্যবসায় যেমন একমালিকানা কিংবা অংশীদারি ব্যবসায়ের মালিক নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।
২. আত্মীয়-স্বজন : মালিকের নিজস্ব তহবিল অপর্যাপ্ত হলে বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের নিকট থেকে ঋণ গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় মূলধনের প্রয়োজন মেটাতে পারে।
৩. বাণিজ্যিক ব্যাংক : সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংকসহ সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে নগদ অর্থ ধার দিয়ে থাকে। সাধারণত ব্যবসায়ের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকই অর্থ সংগ্রহের প্রধান উৎস।
৪. সমবায় ব্যাংক : সমবায় ব্যাংক সদস্যদেরকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দিয়ে থাকে। সদস্যদের বাইরেও এ ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে।
৫. গ্রামীণ ব্যাংক : গ্রামীণ ব্যাংক ছোট আকারের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেয় ।
৬. কৃষি ব্যাংক : বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সরবরাহ করে থাকে।
৭. বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিঃ : দেশের শিল্প উন্নয়নের জন্য এ ব্যাংক স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিয়ে থাকে।
৮. ব্যাংক অব স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ এন্ড কমার্স লিঃ : ক্ষুদ্র ব্যবসায় ও শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের অন্যতম উৎস হলো ব্যাংক অব স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ এন্ড কমার্স বা বেসিক ব্যাংক ।
৯. বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা : অনেক বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও রয়েছে যারা সুদের বিনিময়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে থাকে।
আরও দেখুন...